ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
  ডায়াবেটিস রোগীর সাথে খাদ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই অনেকেই জানতে চাই
  ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ও দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
  সম্পর্কে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের কি ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত অর্থাৎ
  ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
  বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এবং যাদের দ্রুত
  ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে সেসব ব্যক্তিদের জন্য দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার
  উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব এই আর্টিকেল।
পেজ সূচিপএঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
ভূমিকা
  সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষায় যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি ডায়াবেটিসের বেলাও
  এর ব্যতিক্রম হয় না। তবে এ রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে গেলে খাদ্যের ব্যাপারে কিছু
  বিধি নিষেধ মেনে চলা জরুরী। তিনটি বিষয়ে মনে রাখতে পারলে এ রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে
  আনা কোন ব্যাপার না। বিষয়গুলো হল-
- নিষিদ্ধ খাবার বর্জন
- পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ
- প্রতি তিন ঘন্টা পর পর খাবার খেতে হবে
  আজকের আমাদের এই আর্টিকেলে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ও দ্রুত ডায়াবেটিস
  নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক
  উপকারে আসবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
  ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। ডায়াবেটিস কে বলা হয়
  সারা জীবনের রোগ। তবে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যভাস আপনাকে দিতে পারে স্বাভাবিক জীবন। এই
  রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কি খাচ্ছেন এবং কতটুকু পরিমানে খাচ্ছেন এটা অত্যন্ত
  গুরুত্বপূর্ণ।
  আমাদের দেশে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে ফলমূল খেলে রক্তের সুগারের পরিমাণ
  বেড়ে যাবে। আসলে বাস্তবে তা নয়, সব ফল ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর নয়। এমনকি
  কিছু ফল আছে যেগুলো বরং ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
  আরো পড়ুনঃ
  ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা 
  এ ফলগুলো আমাদের শরীরে অপরিহার্য পুষ্টি প্রদান করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
  করে, কেননা এগুলোতে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিন রয়েছে অথচ সুগারের পরিমাণ রয়েছে
  খুবই অল্প। আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সহনীয় মাত্রায় গ্রহণ করেন। নিচে
  ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা দেওয়া হল।
  আপেলঃ আপেলের মধ্যে রয়েছে পেকটিন যা সুগারের মাত্রা কমিয়ে আনে।
  নাশপাতিঃ নাশপাতির মধ্যেও রয়েছে পেকটিন, আমরা যদি পরিমিত পরিমাণে নাশপাতি
  গ্রহণ করি তবে তা রক্তে উচ্চমাত্রার সুগার কমাবে।
  খোবানিঃ এ ফলে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা ডায়াবেটিসের
  জন্য কার্যকরী। তবে তাজা ফলের চেয়ে শুকনোটা যেটাকে আমরা কিসমিস বলি সেটা বেশি
  উপকারী।
  বেরি জাতীয় ফলঃ বেরি জাতীয় ফল যেমন স্ট্রবেরি, রামবেরি ও ব্লুবেরি
  ডায়াবেটিসের glycemic সূচক কমাতে সাহায্য করে।
  কিউই ফলঃ বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফল গ্রহণে একটি ইতিবাচক সঙ্রগতি রয়েছে যা
  সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে।
  চেরি ফলঃ চেরি ফলে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে, যা সুগার লেভেল কমাতে
  সাহায্য করে।
  কুল জাতীয় ফলঃ কুল জাতীয় ফল আঁশ সমৃদ্ধ হাওয়াই এটা ডায়াবেটিস ও
  হৃদরোগীদের জন্য আদর্শ খাবার। এসব ফলে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম সেই সাথে glycemic
  সূচকও কম।
  কমলাঃ কমলা ভিটামিন ও আঁশ সমৃদ্ধ ফল। এটি glycemic সূচক কমাতে সাহায্য করে
  এবং ডায়াবেটিসের জন্য আদর্শ খাবার।
  খেজুরঃ এই বাদামী এবং চটচটে ফল শুধু মিষ্টি স্বাদ যুক্ত নয় এর পাশাপাশি
  এই ফলে রয়েছে ফাইবার। যা ডায়াবেটিস রোগীদের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। একটি গবেষণায়
  দেখা যায়, খেজুর শরীরের আঙ্গুর, কমলালেবু, ফুলকপির তুলনায় অনেক বেশি
  অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর যোগান দেয়।
  দুধঃ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস হিসেবে দুধ ডায়াবেটিস রোগীদের
  জন্য উপকারী খাবার। আপনি চাইলে পনির ও চর্বি ছাড়া দধি ইত্যাদি অন্যান্য দুগ্ধজাত
  খাবারও খেতে পারেন। সকালের নাস্তায় আপনি খেতে পারেন দুধ অথবা একটু করে পনির।
  তিসিঃ ফাইবার এবং আলফা-লেনোলেনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ তিসি আপনার শরীরে ওমেগা
  তিন সরবরাহ করবে। তিসি রক্তের শর্করা এবং কোলেস্টেরলের কমিয়ে আপনার হৃদরোগের
  ঝুঁকি, হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য হৃদযন্ত্রের সমস্যা হ্রাস করে। তাই আজ থেকেই
  সকালের খাবার রাখুন তিসি।
  তুলসীঃ তুলসীকে বলা হয় ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন। তুলসী টাইপ-২
  ডায়াবেটিস রোগের মহা ওষুধ হিসাবে কাজ করে। এছাড়া এটি আপনার যকৃত ভালো রাখবে।
  একটি জার্মান গবেষণায় দেখা যায় খালি পেটে তুলসী পান করলে রক্তের গ্লুকোজের
  মাত্রা কমে যায়। চাইলে তুলসী রস আপনি আপনার চায়ের সঙ্গে যোগ করতে পারেন।
  সিমঃ উচ্চ ফাইবার যুক্ত সিম আপনার উচ্চমাত্রার শর্করা, এমনকি কোলেস্টেরল
  কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা শহরের
  মেদ কমাতে সাহায্য করে। শিম জাতীয় খাবার গুলো আপনি সালাত হিসাবে অথবা সুপ করে
  খেতে পারেন।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
  চিনি-মিষ্টি, মধু বাদ দিতে হবে, ভাত, রুটি , আলু পরিমানমত, পাতা জাতীয় ও পানসে
  সবজি ইচ্ছামত। টক জাতীয় ফল ইচ্ছামত। তবে ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে
  না থাকলে মিষ্টি ফল না খাওয়াই উত্তম। তাই দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার
  উপায় হিসাবে নিম্নের খাদ্যগুলো পরিমাণমতো গ্রহণ করতে হবে।
  শর্করা জাতীয় খাবারঃ অন্যান্য স্বাভাবিক লোকের মতোই শর্করা জাতীয় খাবার
  দৈনিক 50 থেকে ৬০ ভাগ নিন। এ ধরনের খাবার শরীরের শক্তি যোগায়। শর্করা প্রধানত
  দুই প্রকার।
- চিনিযুক্ত শর্করা ও
- শ্বেতসার যুক্ত শর্করা
  সব শর্করাই শোষিত হয়ে দেহে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। তবে সহজ শর্করা যেমন চিনি,
  গুড় গ্লুকোজ এগুলো খাওয়া মাত্র সরাসরি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় এবং
  শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য ধীরে ধীরে বাড়ায়।
  আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
  এ কারণেই চিনি ও গুড় একেবারে নিষেধ করা হয় এবং শ্বেতসার অর্থাৎ ভাত, রুটি,
  শস্যজাতীয় খাবার সীমিত পরিমাণে খেতে বলা হয়। শর্করা জাতীয় খাবার হল, রুটি,
  ভাত, আলু, বিস্কুট, নুডুলস, চালের গুড়া, পরিকা, ভুট্টা, সাগু, বার্লি, সুজি,
  চিড়া, মুড়ি, খই, চিনি, গুড় গ্লুকোজ মধু সেমাই ইত্যাদি।
  অর্থাৎ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিনিযুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন এবং শ্বেতসার
  যুক্ত খাবার গুলো সীমিত পরিসরে গ্রহণ করুন।
  আমিষ জাতীয় খাবারঃ আমিষ প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- প্রাণিজ আমিষ ও
- উদ্ভিজ আমিষ
  সাধারণত প্রাণিজ আমিষের চেয়ে উদ্ভিজ আমিষের গুণগত মান কম। তবে উভয় প্রকার আমিষই
  পরিপাক হয়ে অ্যামাইনো এসিড রূপে রক্তে শোষিত হয়। খাদ্যের মোট ক্যালরির 20 থেকে
  30 ভাগ আমিষ জাতীয় খাবার থেকে আসা উচিত। আমিষ শর্করার মতো রক্তে গ্লুকোজের
  মাত্রা বাড়াই না এবং চর্বির মত অধিক ক্যালোরি উৎপন্ন করে না।
  তবে এটা শরীর গঠন, বৃদ্ধি, ও ক্ষয় পূরণ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে
  দেয়। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের আমিষ জাতীয় খাদ্য স্বাভাবিক লোকের মতো গ্রহণ
  করতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবার হল ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম, শিমের বিচি,
  সয়াবিন ইত্যাদি।
  চর্বি জাতীয় খাদ্যঃ সারাদিনের খাবারের মোট ক্যালরি 20 থেকে 30 ভাগ আসা
  উচিত চর্বি জাতীয় খাদ্য থেকে। তবে সম্পৃক্ত চর্বি যেমন ঘি, ডালডা এবং মানুষের
  চর্বি যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত। কারণ সম্পৃক্ত চর্বিতে দেহের রক্তে কোলেস্টেরল
  ও ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি করে।
  এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের সম্পৃক্ত চর্বি যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। কারণ তারা
  অন্যদের তুলনায় সহজে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। রান্নায় সয়াবিন তেল,
  সূর্যমুখীর তেল, জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করাই উত্তর।
  খাদ্যের আঁশঃ খাদ্যের আঁশ দেরিতে হজম হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের
  সহায়ক। আবার পরিমাণের অতিরিক্ত আঁশ পেটে গিয়ে গ্যাসের সৃষ্টি করে। পেট ব্যথা
  হয়, পেট ফেঁপে যায় ও পাতলা পায়খানা হয়। সেজন্য যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
  আছে এবং যাদের আলসার আছে তাদের এই জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া উচিত। আঁশ জাতীয়
  খাবার হল ভুসিযুক্ত রুটি, লাল চাল, আঁশযুক্ত সবজি ও খোসা সহ ফল।
  সবশেষে বলা যায়, যেহেতু ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ সে জন্য প্রতিটি রোগীর
  আত্মসচেতন প্রয়োজন। অর্থাৎদ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় হিসাবে
  উপরোক্ত কথাগুলো ভালোভাবে মেনে চললে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হবে।
শেষকথাঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা - দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সময় ঠিক রাখা খুব জরুরী। খাবারের সময়টা
  ঠিকমতো খেলে এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেলে দ্রুত
  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হয়। অর্থাৎ আজকের আর্টিকেলে আমরা ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য
  তালিকা ও দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি
  আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাল থাকবেন
 

চাঁপাই আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url