টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি
  বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ কোন না কোন ভাবে কৃষির উপর
  নির্ভরশীল। এদেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অনেক। জাতীয় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ও
  কৃষিজ পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন
  করে। টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি একটি লাভজনক ফসল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করা হয়। টমেটো সবজি হিসেবে
  ব্যবহার করা হলেও সালাত হিসেবে এর জনপ্রিয়তা অনেক।টমেটোতে থাকা বিভিন্ন উপাদান
  আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
  পেজ সূচিপত্রঃ টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি
ভূমিকা
  টমেটো বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় একটা সবজি ও সালাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। টমেটো
  রান্নায় বিভিন্ন সবজিকে আরও সুস্বাদু ও মুখরোচক করে তোলে। টমেটোতে থাকা ভিটামিন
  সি ও ভিটামিন এ আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ি তোলে।
  রূপচর্চায় টমেটোর ব্যবহার অনেক। টমেটো বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয় যেমনঃ টমেটো
  সস, আচার, সালাত, জ্যাম ও জেল ব্যবহৃত হয়।
  আরো পড়ুনঃ
  বস্তায় আদা চাষের উপযুক্ত সময়
  আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি, টমেটোর
  জাতসমূহ, হাইব্রিড টমেটো চাষ পদ্ধতি, আগাম টমেটো চাষ পদ্ধতি, আধুনিক পদ্ধতিতে
  টমেটো চাষ, টমেটো চাষ উপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য ও টমেটো চাষ ও রোগ প্রতিরোধ ইত্যাদি
  সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি
  টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি বর্তমান সময়ে অনেক জনপ্রিয়। এটি চাষের ফলে
  পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক ভাবেও লাভবান হওয়া যায়। টমেটো চাষের
  জন্য প্রথমত উপযুক্ত মাটির নির্বাচন করতে হবে। সব ধরনের মাটিতে টমেটো চাষ হলেও
  উর্বর দোঁআশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
  তবে ঠিকঠাকভাবে পরিচর্যা করলে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতেও টমেটো ফলন ভালো হয়।
  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টমেটো অক্টোবরের শেষে কোনভেম্বরের প্রথমে টমেটোর চারা
  লাগানোর উপযুক্ত সময়। টমেটো চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রা
  থাকা জরুরী।
টমেটোর জাতসমূহ
  টমেটো চাষের জন্য টমেটোর জাত নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যদি আপনি
  টমেটোর সঠিক জাত নির্বাচন করতে পারেন তাহলে ফলন ভালো পাবেন। চলুন তাই আর দেরি না
  করে জেনে নেই টমেটোর জাতসমূহ।
- বারি টমেটো ৩,
- বারি টমেটো ৪,
- বারি টমেটো ৫,
- রোমা ভিএফ,
- রোমারিও,
- টিপু সুলতান,
- গ্রেট পেলে,
- ডেল্টা এফ ১,
- উন্নয়ন এফ ১,
- পুষারুবী,
- নিউ রূপালী এফ ১
- বারি টমেটো ৬,
- বারি টমেটো ৯, বাহার, মহুয়া ইত্যাদি।
টমেটোর বীজ
  টমেটো বীজ সরাসরি বপন না করে, বীজ তলায় চারা তৈরি করতে হয়। এর জন্য আগে থেকেই
  বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে। বীজ বপনের ৮ থেকে ১২ ঘন্টা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে
  বীজের ফলন ভালো হয়। সাধারণত ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বীজতলা থেকে চারা গজাবে এবং
  ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে জমিতে রোপণ করতে পারবেন।
চারা রোপন
  চারাগুলো ২০-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে তা মূল জমিতে রোপন করা হয়। প্রতিটি যারা
  থেকে ৬০-৭০ সেমি এবং সারি থেকে ৭০-৮০ সেমি দূরত্বে রোপন করতে হয়। যারা রোপনের পর
  চারার গোড়া ভালোভাবে চেপে দিতে হবে এবং পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
  মাটির উর্বরতা ও ফসল বৃদ্ধির জন্য জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে
  হবে। রাসায়নিক সার যেমনঃ ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সঠিক পরিমাপে দিতে হবে। মূল
  জমিতে রোপনের ১৫-২০ দিন পর প্রথম সার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থা
  টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। টমেটো গাছে নিয়মিত সেচ দিতে
  হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত পানি জমে থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে গাছ পচে যাওয়া সম্ভাবনা
  রয়েছে।
রোগবালাই দমন
  গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকাই রোগবালাই বেশি আক্রমণ করে। বিশেষ করে ছত্রাক,
  ভাইরাস ও বিভিন্ন ধরনের পোকা আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সঠিক সময়ে কীটনাশক
  প্রয়োগ ও নিয়মিত সার ব্যবহার করতে হবে।
হাইব্রিড টমেটো চাষ পদ্ধতি
  হাইব্রিড টমেটো চাষ পদ্ধতি অনেক লাভজনক। এটি চারা রোপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফসল
  দেয়। জাত টি উচ্চ তাপ সহনশীল ও সারা বছরই চাষ করা হয়। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর
  মাসে চারা রোপণ করতে হয়। এটি উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে মৌসুমে ২০-২৫ টন ফলন
  হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষ অনেক লাভজনক। টমেটো একটি অতি প্রয়োজনীয় ও
  পুষ্টিকর সবজি।
  এতে থাকা ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। টমেটো কাঁচা
  অথবা রান্না উভয় ভাবে খেতে পারেন। এটি আমাদের ত্বকের যত্নে ও শরীরের বিভিন্ন রোগ
  প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখে। টমেটো বাংলাদেশের শীতকালীন
  সবজি হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন জাতের
  টমেটো উদ্ভাবন করেছে। সেগুলো চাষ করেও কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
আগাম টমেটো চাষ পদ্ধতি
  আগাম টমেটো চাষ করার জন্য উপযুক্ত জাত হচ্ছে বিনাটমেটো ৩, বিনাটমেটো ৪, বারিটমেটো
  ৪, বারিটমেটো ৫ এবং বারিটমেটো ৬ ইত্যাদি। এগুলো আপনি আপনার বাসা বাড়িতে ছাদে
  অথবা পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাত চাষ করতে পারবেন। এর জন্য ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া
  দুইটি বীজ তলায় লম্বালম্বি ভাবে একটি ছাওনির ব্যবস্থা করে নিতে হবে।
  ছাউনির খুঁটিটির উচ্চতা ১৫০ সেমি এবং মাঝখানের খুঁটির উচ্চতা ২২০ সেমি হতে হবে।
  জমি থেকে বীজ তলার উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। ২৫-৩০ দিন বয়সের
  যারা প্রতি বেডে দুই সারিতে রোপন করতে হবে এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০
  সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারা দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়।
  আরো পড়ুনঃ আলু চাষের উপযুক্ত সময় - আলু চাষে কীটনাশক
  গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জন্য টমাটোটোন নামক হরমোন প্রয়োজন। স্প্রের এর সাহায্যে ৫
  চামচ প্রতি লিটারে হরমোনটি ফুটন্ত ফুলে ৮ থেকে ১০ দিনে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে।
  এরপর নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে এবং পোকামাকড় দমনের জন্য নিয়মিত স্প্রে করতে
  হবে।
টমেটো চাষ উপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য
  টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি জানার পাশাপাশি টমেটো চাষ উপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য
  সম্পর্কে বেশি ভালোভাবে জেনে তবেই টমেটো চাষ করা উচিত। এক্ষেত্রে অনেক
  সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। ফলন ভালো হয়। টমেটো সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা হয়।
  তবে টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হচ্ছে দোআঁশ। একটু পানি ও পুষ্টি উপাদান ধরে
  রাখতে সহায়তা করে।
টমেটো চাষ ও রোগ প্রতিরোধ
  টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি এর সাথে রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে হবে। তা না
  হলে নানা ধরনের সমস্যা পড়তে পারেন। টমেটোর গাছে পাতার কিনারায় এবং পাতার উপরে
  বাদামি সবুজ রঙের কথা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও পরবর্তীতে পাতা ঝরে পড়া, পাতা
  কুঁকড়ে যাওয়া ও শুকিয়ে মারা যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।
  এছাড়াও টমেটোর ঢলে পড়া, নাবি ধসা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। এই সব রোগ প্রতিরোধের
  জন্য রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম অথবা কার্বান্ডিজম জাতীয় ছত্রানাশক যেমন (এমকোজিম ৫০
  অথবা গোল্ডাজিম ৫০০ ইসি ১০ মিলি /২ মুখ ) ১০ লি পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ৩ বার
  গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
  মোজাইক রোগ ও পাতা কোকড়ানো দমনের জন্য এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০
  লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও আগাছা দমনের জন্য
  জমিতে ভালো হবে চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক রোগ
  প্রতিরোধ করা সম্ভব।
শেষ কথা
  আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি
  সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে কোথাও
  কোন সমস্যা হয় তাহলে আর্টিকেলটি পুনরায় মনোযোগের সাথে পড়ুন।
  আরো পড়ুনঃ বারোমাসি সবজি তালিকা
  টমেটো চাষ - টমেটো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা মতামত অথবা আরো জানতে চান
  তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার
  মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে
  শেয়ার করুন, ধন্যবাদ।
 

চাঁপাই আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url